আগামী বছর থেকে বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য পেনশনব্যবস্থা চালু হচ্ছে। এ জন্য গঠন করা হবে একটি ‘কন্ট্রিবিউটরি পেনশন ফান্ড’। এই ফান্ডে বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীরা তাদের বেতনের একটি অংশ জমা রাখবেন। একই ফান্ডে অংগ্রহণ থাকবে এসব চাকরিজীবীর নিয়োগ কর্তাদেরও। এ জন্য গঠন করা হবে একটি সার্বজনীন ‘পেনশন কর্তৃপক্ষ’। ইতোমধ্যে এই পেনশন ব্যবস্থার একটি রূপরেখার খসড়া প্রণয়নের কাজ প্রায় শেষ করে আনা হয়েছে বলে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা গত সপ্তাহে এই প্রতিবেদকে বলেছেন, একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে এই ফান্ডের একটি রূপরেখা প্রণয়নের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এই রূপরেখা প্রণয়ন হলে তা অনুমোদনের জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। এরপরই উদ্যোগ নেয়া হবে এ ব্যবস্থা চালুর। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছর থেকে সীমিত পর্যায়ে হলেও বেসরকারি খাতে পেনশনব্যবস্থা চালু করা হবে।
তিনি বলেন, এই পেনশন কন্টিবিউটরি ফান্ডে বেসরকারি খাতে কর্মরত একজন চাকরিজীবী তার বেতনের একটি অংশ প্রদান করবেন। ফান্ডে সংশ্লিষ্ট চাকরিজীবীদের নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানও অবদান রাখবেন। এই ফান্ডটির পুরোটি নিয়ন্ত্রণে থাকবে সরকারের হাতে। এখানে সরকারি চাকরিজীবীদের ভবিষ্যৎ পেনশনের অর্থও জমা থাকবে। সরকারি-বেসকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য এটি একটি ‘সার্বজনীন ফান্ড’ হবে। সংশ্লিষ্ট চাকরিজীবীরা এই ফান্ডে একটি ‘কোড’ নাম্বারের বিপরীতে অর্থ জমা রাখবেন। তারা চাকরি পরিবর্তন করলেও কোড নাম্বারের কোনো পরিবর্তন হবে না। অবসর নেয়ার পর রূপরেখা অনুযায়ী এই কোডের বিপরীতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি পেনশন পাবেন।
এই ফান্ডের টাকা সরকার বিভিন্ন লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করে মুনাফা করবে এবং এই মুনাফার অর্থ ফান্ডে অংশ নেয়া চাকরিজীবীরাও পাবেন। তবে কাউকে বাধ্য করা হবে না এই ফান্ডে অংশগ্রহণের জন্য। বেসরকারি উদ্যোক্তারা এ জন্য কোনো কর রেয়াত পাবেন কি নাÑ এ প্রশ্নের জবাবে অর্থ বিভাগের কর্মকর্তা-‘না’ সূচক জবাব দেন।
বেসরকারি খাতে পেনশন পদ্ধতি চালুর বিষয়ে ২০১৪ সালের ৬ এপ্রিল এনজিও প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক প্রাক-বাজেট আলোচনায় প্রথম কথা বলেছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এর পর ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যেও এ বিষয়ে তার কথা থাকে। অর্থমন্ত্রীর মতে, নগরায়নের কারণে একক পরিবারের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে ভবিষ্যতে তাদের আর্থিক ও সামাজিকভাবে নিরাপত্তাহীন হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। সরকারের একার পক্ষে এ ঝুঁকি মোকাবেলা করা দুরূহ। তাই দেশের সব শ্রমজীবী মানুষ প্রবীণদের জন্য একটি সার্বজনীন ও টেকসই পেনশন পদ্ধতি চালু এখন সময়ের দাবি।
চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা সম্পর্কে সাংবাদিকদের বলেছেন ‘এখন থেকে আর কাউকে তার পেনশনের হিসাব করা, পেনশন নেয়াÑ এগুলো চিন্তাভাবনা করতে হবে না। ইট ইজ ইন কিপিং উইথ দ্য ফিলোসফি অব দ্য স্টেট। কারণ, এখন ফিলোসফি হলো যত সিটিজেন আছে সবাইকে একটা সুযোগ করে দিতে হবে। এটা ইউনিভার্সেল পেনশন, যেটা আমরা মোর অল লেস কমিটেড, যেকোনো সময় হয়তো সেটা হবে। তিনি বলেন, দেশের পেনশন ব্যবস্থার সর্বশেষ সংস্কার হয়েছিল ১৯৮৩ সালে। আজ যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা যুগান্তকারী। এখন থেকে পেনশন উঠাতে ছোটাছুটি করতে হবে না।
মুহিত বলেন, ‘এ জন্য আগামী বাজেটে আই অ্যাম থিঙ্কিং অ্যান্ড অ্যানাউন্সিং। আমরা পেনশন সিস্টেমের যেটা করলাম, এটা নিয়ে দেশের প্রত্যেক নাগরিক বেনিফিটেড হবে। কারণ জাতীয় পেনশন পদ্ধতিতে সবাইকে ইনকরপোরেট করা হবে। ১৬ কোটি মানুষ উড বি ইনকরপোরেটেড ইন দ্য ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম।’
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তো আগেও বলেছি আমরা চিন্তা করছি, পেনশন সিস্টেম ফর দ্য হোল ন্যাশন। আমি সেটার রূপরেখাটা অ্যানাউন্স করব। এটা ইন্ট্রোডিউস হবে না ইমিডিয়েটলি, বাট উই স্যাল অ্যানাউন্স দ্য আউটলাইন অব দ্য ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম। এটা নিয়ে আমাদের এখানে কাজ হচ্ছে।’
সে সময় তৎকালীন অর্থসচিব মুসলিম চৌধুরী বলেন, ‘ইউনিভার্সেল পেনশন সিস্টেমের জন্য ইনস্টিটিউশন তৈরি করতে হবে। ফরমাল ও ইনফরমাল পেনশনের জন্য রেগুলেটরি অথরিটি লাগবে। অর্থমন্ত্রী এবার বাজেটে এটার রূপরেখা দেবেন।
(কপি: নয়াদিগন্ত)
(কপি: নয়াদিগন্ত)
0 comments:
Thanks for visit my website. Feel free discussion from my any post and I will happy for suggestions.